নিঁখুত ছবি ওঠে না, পুরোটাই AI এর খেলা, Samsung এর স্পেশ্যাল ক্যামেরা ফিচার কি জাল?

আজকালকার যুগে স্মার্টফোন আর শুধুই যোগাযোগের মাধ্যম নয়। হাজারো কাজ সম্পন্ন করতে হ্যান্ডসেটগুলি এখন একাই একশো। আর বর্তমান সময়ে ফোনে একটি ভালো ক্যামেরা না থাকলেই নয়। পেশাদার ক্যামেরায় তোলা ছবির সাথে তাল মেলাতে মোবাইল ফোন নির্মাতারা প্রতিনিয়ত তাদের ডিভাইসের ক্যামেরা সেন্সরগুলির গুণমান বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্যামেরা সেটআপের সামগ্রিক উন্নয়নের দিকটিও বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখে। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড স্যামসাং (Samsung)-ও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। কোম্পানিটি তাদের ফ্ল্যাগশিপ হ্যান্ডসেটগুলির ক্যামেরা সেগমেন্টে নিত্য নতুন ফিচার যোগ করা থেকে শুরু করে উন্নততর লেন্স ব্যবহার করা- সবই করে থাকে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে স্যামসাংয়ের কিছু প্রিমিয়াম হ্যান্ডসেটে প্রাপ্ত “স্পেস জুম” ফটোগ্রাফি ফিচারটি নেট দুনিয়ায় বেশ সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে এই ফিচারের সাহায্যে তোলা চাঁদের অবিশ্বাস্যরকমের সুস্পষ্ট ছবি ইন্টারনেটে ছেয়ে গিয়েছে। তবে একটি সাম্প্রতিক রেডডিট (Reddit) পোস্ট স্যামসাংয়ের ফোনে তোলা চাঁদের ছবির সত্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিটি সূক্ষ্ম বিশদযুক্ত চাঁদের ছবি পাওয়ার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর সাহায্য নিয়েছে। আর পুরো বিষয়টি প্রমাণের সাথে প্রদর্শন করেছেন ওই রেডডিট ব্যবহারকারী, যা দেখে বলা যায় যে স্যামসাংয়ের চাঁদের ছবিগুলি আসলে নকল। আসুন তাহলে এই রেডডিট পোস্টটি কি কি তথ্য তুলে ধরেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

স্যামসাংয়ের “স্পেস জুম” ব্যবহার করে তোলা ছবিটি কি আসলে নকল?

প্রথমেই জানাই, স্পেস জুম হল স্যামসাংয়ের একটি ফ্ল্যাগশিপ ফটোগ্রাফি ফিচার, যা ব্যবহার করে তোলা চাঁদের কিছুর ছবি সম্প্রতি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিল। তবে এখন এই ছবিগুলিকে ঘিরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেননা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রেডডিট-এর এক ব্যবহারকারী এগুলি পরীক্ষা করে সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন।

এই পরীক্ষার প্রথম ধাপে, ওই ব্যক্তি চাঁদের একটি ইচ্ছাকৃত অস্পষ্ট বা ব্লার্ড ছবি তৈরি করে কম্পিউটারে ফুল স্ক্রিনে রাখেন। তারপরে একটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা স্মার্টফোন ব্যবহার করে স্ক্রিনটির ছবি তোলেন। স্বাভাবিক অবস্থায় কখনই ফোনে তোলা ছবিটি চাঁদের স্পষ্ট ছবি তুলতে পারবে না, কারণ আসল ছবি যেখানে ব্লার করা।

আশ্চর্যজনকভাবে, গ্যালাক্সি ফোনে তোলা চিত্রটি শার্প বা তীক্ষ্ণ দেখায় এবং চাঁদের সূক্ষ্ম ডিটেলস গুলি তুলে ধরে যা আসল ফটোতে উপস্থিতই ছিল না। যদিও স্যামসাং জানিয়েছে যে, তাদের স্মার্টফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবিতে কোনোরূপ ইমেজ ওভারলেয়িং বা টেক্সচার ইফেক্টের ব্যবহার করা হয়নি, তবে তারা এই বিষয়টি অস্বীকার করতে পারেনি যে, চাঁদ সনাক্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI)-এর ব্যবহার হয়েছে। আর এখানেই লুকিয়ে রয়েছে এই ছবিগুলির নকল হওয়ার রহস্য।

আলোচ্য রেডডিট পোস্টটিতে চিত্র প্রক্রিয়াকরণের গুরুত্ব এবং জটিলতাকে তুলে ধরা হয়েছে। এটি ডিজিটাল ফটোগ্রাফি এবং কম্পিউটেশনাল এনহ্যান্সমেন্টের যুগে একটি “ফেক” ফটো গঠনের বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। এই ক্ষেত্রে ক্যামেরার লেন্সে চাঁদের ঝাপসা ছবি এলেও, এআই এর দৌলতে প্রসেসিংয়ের পর তা স্পষ্ট দেখাচ্ছে।

রেডডিট ইউজার এই প্রসঙ্গে যুক্তি দিয়েছেন যে, সমস্যাটি এই কারণে জটিল যে “ফেক” বা নকল হওয়ার ধারণাটি শুধুমাত্র আসল বা নকল ছবিকে ঘিরে গড়ে ওঠেনি, এটির পরিসর আরও বিস্তৃত। বলা হয়েছে যে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবির ঝাপসা অংশগুলিকে উন্নত করার পরিবর্তে এআই-এর সাহায্য নিয়ে স্যামসাং যে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করছে তাতে সমস্যা আছে, কারণ এটি ছবিতে পরিপূর্ণতা আনতে নতুন উপাদান যোগ করে যা আসল ইমেজে ছিলই না। এই প্রক্রিয়াটি আসল ফটোগ্রাফের পরিবর্তে একটি ‘জেনারেটেড ইমেজ’ বা বলা ভালো একটি কৃত্রিম ছবি তৈরি করে এবং অনেকেই মনে করছেন এটি “ফেক” বা নকল।

উল্লেখ্য, রেডডিট ইউজারের যুক্তি অনুযায়ী, স্যামসাংয়ের ‘মুন ফটোগ্রাফি’ ভাইরাল হওয়ার পর, স্পেস জুম ফিচারটি গ্রাহকদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। আর এই ফিচারের কার্যপ্রণালী সঠিকভাবে ব্যাখ্যা না করার কারণে বহু ব্যবহারকারীই ধরে নিয়েছিলেন যে, এটি আসলে ফোন ক্যামেরার অপটিক্যাল জুমের কামাল। কিন্তু এখন অবশেষে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, বিষয়টি আসলে তা নয়। এর মধ্যে সফটওয়্যারের খেলাও রয়েছে।

Related Articles

Back to top button